গর্ভে সন্তান মারা যায় কেন ?
আর সন্তান কেন বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মায় ?
সন্তান প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় কেন, আর কেনই বা এই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় অনেক মা ??
কখনও কি এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছেন? না জেনে থাকলে জেনে নিন কারণগুলো। আর কিভাবে এই মৃত্যু রোধ করা সম্ভব সেই সম্পর্কেও জেনে নিন।
বেশিরভাগ সময়ে গর্ভবতী মায়েরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করে থাকে গর্ভাবস্থার ৮-৯ মাসের সময়। এত দেরিতে কেন আসলেন ডাক্তার এমন প্রশ্ন করলে উত্তর আসে,”কি বাবু সেটা তো এখনই ভালো বুঝা যাবে। বাবু ছেলে নাকি মেয়ে এটা জানতেই এতদিন অপেক্ষা”।
নিয়মিত ফলোআপে আসা রোগীকে যদি ৩ মাসের সময় বলা হয়, একটা আল্ট্রাসনো করে নেওয়ার জন্য , উত্তর আসবে, “এখন না ম্যাডাম, ৭/৮ বা ৯ মাসের সময় করাবো।”
ব্যপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আল্ট্রাসনোগ্রামের একমাত্র লক্ষ্য গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এই বিষয়টি জানা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এত কষ্ট করে, এত টাকা ও মেধা ব্যয় করে, এত বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন তৈরি করাটা কি শুধুই গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে এটি জানার জন্য?
ডাক্তারগণ যে কয়েকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করায় সেটার কি সত্যিই কোন দরকার আছে? নাকি সবটাই টাকা খাওয়ার ধান্দা??
আজকে জানাবো গর্ভকালীন সময়ে কখন, কতবার এবং কেন আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে আর আল্ট্রাসনোগ্রাম করার উদ্দেশ্য কি??
**********************************************************************************
গর্ভাবস্থায় অন্তত ৩ বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত।
♦♦ ১ম আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে ২-৩ মাসের মধ্যে। ২য় মাসে করানোটাই সবচেয়ে উত্তম। এসময় আল্ট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারা যায় রোগী আসলেই গর্ভবতী কিনা। অনেক সময় দেখা যায় প্রস্রাব টেস্টে পজিটিভ দেখালেও ব্লাড টেস্ট বা অন্যান্য টেস্টের রিপোর্টে গর্ভে কোন সন্তান নেই। এর কারণ, অনেক সময় শুধুমাত্র সন্তানের থলি আসে, কিন্তু থলিতে কোন ভ্রুণ বা সন্তান থাকে না। সন্তান জরায়ুতে আছে নাকি অন্য কোথাও এই বিষয়টি শুধুমাত্র আল্ট্রাসনোগ্রাম থেকেই জানা সম্ভব।
সন্তান জরায়ুতে না থেকে অন্য কোথাও থাকলে এই পরিস্থিতিকে বলে এক্টপিক প্রেগন্যান্সি। এক্টপিক প্রেগন্যান্সিতেও প্রস্রাব টেস্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু এই প্রেগন্যান্সির সন্তান বেশিদিন বাঁচে না। পেটের ভেতরেই ভ্রুণ বা সন্তান মারা যায়।
গর্ভে সন্তান একজন নাকি একের অধিক এই বিষয়টিও জানা যায় এই সময়ে। অর্থাৎ ২-৩ মাসের সময় আল্ট্রাসনোগ্রাম করার মাধ্যমে।
অনেকে মাস বা তারিখ মনে রাখতে পারে না। মাস বা তারিখ মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দুই মাসে আল্ট্রাসনোগ্রামে করে সন্তানের বয়স কত এই বিষয়ে জানা যায়। আর মায়ের জরায়ুতে কোন সমস্যা আছে কি না এটিও এই সময়ের অল্ট্রাসনোগ্রাম নির্ণয় করে থাকে। সকলের জানা উচিত যদি মায়ের জরায়ুতে সমস্যা থাকে তাহলে অনেক সময় গর্ভপাত/মিসক্যারেজ হয়ে যায়।
রক্তদাতা খুঁজে পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকে।
রেজিষ্ট্রেশন লিংকঃ
https://roktobondhon.com/registration/
♦♦ ২য় আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হবে গর্ভাবস্থার ৫ম মাসে। সন্তান জীবিত নাকি মৃত সে সম্পর্কে জানতে পারা যায় এই সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে।
★ প্লাসেন্টা, যাকে অনেকেই ফুল বা গর্ভফুল নামে জানেন। প্লাসেন্টার অবস্থান কোথায় বা সঠিক স্থানে আছে কি না সে সম্পর্কে জানা যায় এই সময়ের পরীক্ষায়। প্লাসেন্টার অবস্থানের উপর ডেলিভারি কতটা নিরাপদ হবে এই বিষয়টি বুঝা যায়। অনেক মা-ই ডেলিভারির পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। তার কারণই হচ্ছে আগে থেকে এই প্লাসেন্টার অবস্থান সম্পর্কে না জানা এবং সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে না পারা।
সন্তানের কোন জন্মগত কোন ত্রুটি আছে কি নেই এই বিষয়টি জানতে ৫ম মাসে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত। আগে থেকে এই বিষয়টি জানা থাকলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা সম্ভব। আর এর ফলে অনেক সন্তান প্রতিবন্ধকতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। তবে সকল ক্ষেত্রেই সফলতা বা সুস্থতা লাভ করা যাবে এমনটা নয়। কারণ, কিছু বিষয় আছে যা স্রষ্টীয় অর্থাৎ স্রষ্টার নির্ধারিত।
ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে জানতে হলেও ৫ম মাসে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে।
♦♦ শেষ আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয় ৮/৯ মাসে। এই সময় জানতে পারবেন সন্তানের ওজন সম্পর্কে। প্লাসেন্টাতে কোন সমস্যা আছে কি না? জরায়ুতে কতটুকু পানি আছে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে এই সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রামে। পানি কম থাকলে সন্তান প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং অক্সিজেন পায় না। এতে করে ডেলিভারির নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত গর্ভের সন্তানের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আবার বলে অতিরিক্ত পানি থাকাও ভালো না। এটিও সন্তানের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত পানি থাকলে সন্তান দম বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।
সন্তানের পজিশন সম্পর্কে জানা যায় এই সময়ের আল্ট্রাসনোগ্রামে। সাধারণত মাথা নিচের দিকে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা সহজ। যদি মায়ের হেলথ কন্ডিশন স্বাভাবিক না থাকে তাহলে বাচ্চার পজিশন সঠিক থাকার পরেও অনেক সময় সিজার করাতে হতে পারে। আর বাচ্চার পজিশন অন্য রকম হলে বা মায়ের শরীরে রক্তের অভাব দেখা দিলে বা সন্তানের শরীরে নাড়ি পেচিয়ে গেলে মা ও সন্তানকে বাঁচাতে সিজারের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠♠
দয়া করে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে শুধুমাত্র এটি জানার জন্য কেউ আল্ট্রাসনোগ্রাম করাবেন না। আল্লাহ/স্রষ্টা যে উপহার দিয়েছেন তা তো বদলানো সম্ভব না। বরং যা জানতে পারলে মা ও সন্তানের সুস্থ থাকাটা অনেকটা নিশ্চিত করতে পারবেন সেটাই জানুন।
★★ ডাক্তারখানায় অল্প ভিজিটে নিয়মিত চেকআপ ও পরামর্শ গ্রহন করতে পারবেন। এছাড়াও মাত্র ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে ডিজিটাল আল্ট্রাসনোগ্রাম করার সুযোগ তো থাকছেই। আবার ব্লাড প্রেসার, ডায়বেটিস এসব খুঁটিনাটি বিষয় টেস্ট করার সুযোগও আছে এই সময়।
মায়ের যত্ন নিন। একজন সুস্থ মা-ই জন্ম দিতে পারে সুস্থ সন্তানকে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সন্তান প্রসবের সময় ( সিজার হোক বা নরমাল) অথবা গর্ভাবস্থার যে কোন সময়ে রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে ৫ থেকে ৯ মাসের মধ্যে যে কোন মুহূর্তে গর্ভবতী মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। এসময় জরুরী রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে সেটা না জেনে, গর্ভবতী মায়ের রক্তের গ্রুপ জেনে ডেলিভারির অন্তত ৪ মাস আগে থেকে কমপক্ষে দুইজন রক্তদাতা প্রস্তুত করে রাখুন। এতে মা ও সন্তানের সুস্থতা এমনকি জীবন বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে। আর পরিবার বা পরিচিতদের মধ্যে কেউ গর্ভবতী থাকলে রক্তদাতা প্রস্তুত রাখতে এবং উপরোক্ত বিষয়ে সচেতন হতে সহায়তা করুন।