★ তোমার রক্তের গ্রুপ কি?
> আমার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ।
★ আরে তোমার তো গরুর রক্ত।
তোমার রক্ত লাগলে গরুর থেকে রক্ত নেওয়া যাবে।
এমন প্রশ্ন বা উত্তর সচারাচর আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। কিন্তু কেন এমনটা বলা হয়? আসলেই কি গরুর রক্ত বি পজেটিভ? আর মানুষের শরীরে গরুর রক্ত বা গরুর শরীরে মানুষের রক্ত পরিসঞ্চালন কি আদৌ সম্ভব। আসুন, আজ জেনে নেই পুরো বিষয়টি।
মূলত পৃথিবীতে যত মেরুদন্ডী প্রাণী আছে এদের সকলের রক্তই সাদৃশ্যপূর্ণ। অর্থাৎ, সকল মেরুদন্ডী প্রাণীর রক্তই লাল।
তবে প্রতিটি প্রানীর আলাদা আলাদা রাসায়নিক বা উপাদানগত পার্থক্য রয়েছে। আর এজন্যই এক প্রাণীর রক্ত অন্য প্রাণীর দেহে সঞ্চালন সম্ভব না। রক্তের গ্রুপ বলতে লোহিত রক্ত কনিকায় অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিকে বুঝায়।
রক্তে অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নির্ণয় করে বুঝা যায় একজন ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ কি।
মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ABO সিস্টেম এবং RH ফ্যাক্টর সিস্টেম প্রচলিত। এই সিস্টেমের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয় A+,B+,AB+,O+ আর A-,B-,AB-,O- এই ৮ ধরনের রক্তের গ্রুপ। মানুষের দেহে এই ৮ টি অ্যান্টিজেন থাকে (এই ৮ টি গ্রুপ ব্যতীত বর্তমানে আরও দুটি গ্রুপ নির্ণয় করা হয়েছে, যা অত্যন্ত রেয়ার)।
অন্যদিকে গরুর রক্তে অ্যান্টিজেন বিদ্যমান ১১ টি। এগুলো যথাক্রমে- A, B, C, F, J, L, M, R, S, T এবং Z অ্যান্টিজেন। এসব এন্টিজেনের মধ্যে আবার রয়েছে (±) অ্যান্টিজেন। আবার B+ অ্যান্টিজেনের মধ্যেই রয়েছে ৬০ টিরও বেশি অ্যান্টিজেন। অর্থাৎ, দুটি গরুর রক্ত যদি বি পজেটিভও হয় তাদের মধ্যে অ্যান্টিজেন মিলানো প্রায় অসম্ভব। যেখানে একই গ্রুপের রক্ত হলেও দুটি গরুর মধ্যে রক্ত পরিসঞ্চালন সম্ভব নয়। সেখানে রক্তের উপাদানে মিল না থাকার পরেও কিভাবে গরুর রক্ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ বা পরিসঞ্চালন সম্ভব বলেন ?
তাহলে কেন বলা হয় বি+ গরুর রক্ত?
আমরা অনেকেই জানি এশিয়া মহাদেশে বি পজেটিভ রক্তের গ্রুপধারী মানুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশ্লেষণের আগে বলে রাখি এই তথ্যটি বা আমাদের এই জানাটি সম্পূর্ণ ভুল। এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বেশি ও পজেটিভ রক্তধারী মানুষ বিরাজমান। গবেষণায় দেখা গেছে এশিয়ায় শতকরা ৩৯ শতাংশ মানুষের দেখে ও পজেটিভ রক্ত প্রবাহমান এবং বি পজেটিভ রক্ত প্রবাহমান এমন মানুষের সংখ্যা ৩২ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি বি+ রক্তধারী মানুষ পাওয়া যায় এই ধারণা বা এই সহজলভ্যতার কারণেই মজা করে বলা হতো বি পজেটিভ রক্ত গরুর রক্ত। আর এই মজাই একসময় এমন মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে যারা জানে না আসলে বিষয়টি কি। তাদের সরল মনে জায়গা করে নেয় বি পজেটিভ গরুর রক্ত।
আমরা মনে করি, বি পজেটিভ সস্তা রক্ত আর এবি নেগেটিভ বা যে কোন নেগেটিভ রক্ত খুব দামী রক্ত। আসলে আমাদের এই ধারণাটা ভুল। রক্ত কখনই সস্তা নয়, বরং এটি অমূল্য দানের সম্পদ। হোক সেটি বি পজেটিভ বা এবি নেগেটিভ। বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন এমন রোগীর শরীরে যদি দামী মনে করা নেগেটিভ কোন রক্ত দেওয়া তাহলে রোগীর কোন উপকারই হবে না বরং রোগীর শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে সাথে সাথে সেই রোগী মারা যাবে। আবার নেগেটিভ রক্তধারী রোগীকেও যদি পজেটিভ গ্রুপের কোন রক্ত দেওয়া হয় তার ক্ষেত্রেও এমনটাই হবে।
শুধুমাত্র ও নেগেটিভ রক্ত সকল গ্রুপের রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে তা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর অ্যান্টিজেনের সাথে রক্তদাতার অ্যান্টিজেন মিলছে কিনা তা পরীক্ষা করে তবেই বিশেষ কিছু ক্ষেতে এই রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয়। যা আমাদের দেশে অত্যন্ত রেয়ার বা দুর্লভ ঘটনা।
বি পজেটিভ রক্তদাতার সংখ্যা বেশি এটা আমরা মাথায় রাখি। তবে এটা ভাবি না যে, বি পজেটিভ রক্তের মানুষ বেশি হলে রোগীর পরিমাণও বেশি হবে। আর তাই রক্তের প্রয়োজনও বেশি হয়।
বিশেষ করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দিকে খেয়াল করলে দেখবেন একজন রোগীর জন্য কয়েক মাসের মধ্যে ৪০-৫০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। এবং এমনটাও দেখা যায় এক দিনে ৫ থেকে ৭ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজনও পড়ে তাদের। ৫-৭ ব্যাগ রক্ত মানে ৫-৭ জন রক্তদাতার প্রয়োজন।
পক্ষান্তরে এবি- রক্তধারী মানুষের সংখ্যা কম,তাই রোগীর পরিমাণও কম। আর তাই রক্তদাতারও প্রয়োজন কম। এই মানুষ বা রোগীর পরিমাণ কম বলেই আমরা বলে থাকি এবি- রক্ত দুর্লভ বা রেয়ার।