কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া কি

কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া কিঃ

মানব দেহে থাকা প্রতিটি কিডনির উপরে ছোট একটি করে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থাকে। কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH) হচ্ছে এমন একটি রোগ যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। যার ফলে বিপাক, অনাক্রম্যতা, কিডনির স্বাভাবিক কাজ স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। এই কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া এর দুইটি ধরণ আছে। একটিকে বলা হয় নন ক্লাসিক ধরণ, যা হালকা হিসেবে বিবেচিত। অপর ধরণটি হচ্ছে ক্ল্যাসিক, যাকে গুরুত্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও এই পরিস্থিতির কোনো প্রতিকার নেই। তবে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং কার্যকরী চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ স্বাভাবিক ও গঠনমূলক জীবন-যাপন করতে পারে।

প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গসমূহঃ

কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH) এর ধরণের উপর ভিত্তি করে এই রোগের উপসর্গগুলোকেও ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। ভাগ দুইটি হচ্ছে–
১. ক্লাসিক কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া:
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করটিসল হরমোন উৎপাদন হলে সুগার ও শক্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা, রক্তচাপ এবং বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করার শক্তি বজায় থাকতে অসুবিধা হয়। ফলে দেহে হরমোন অ্যালডোস্টেরনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং পটাসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে মহিলাদের ক্ষেত্রে শারীরিক উচ্চতা কম এবং যোনির অস্বাভাবিক বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের অতিরিক্ত উৎপাদন লক্ষ্য করা যায়।
আবার শিশুদের ক্ষেত্রে মেয়েদের যৌনাঙ্গ এবং ক্লিটরিস বড় হয়ে যায়। এর পাশাপাশি করটিসলের পরিমাণ কম থাকায় শিশুরা প্রায়ই অসুস্থতার মধ্যে জড়িত থাকে।
আর বয়ঃসন্ধিকাল এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত ও অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি শুরু হয়। এবং এটি বয়ঃঃসন্ধিকালের আগেও শুরু হতে পারে। তবে এই বৃদ্ধি গড় বা গড়ের কম উচ্চতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি পিউবিক চুল (যৌনকেশ) এর বিকাশ তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।

নন ক্লাসিক কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া:
নন ক্লাসিক কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্মের সময় কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না। শুধুমাত্র শৈশবের শেষের দিকে বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার শুরুর দিকে মানুষের মাঝে এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া শুরু হয়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে ব্রণ, পুরুষালী কন্ঠ এবং মুখে এবং শরীরে মাঝারি চুল গজানো। আর পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যে সাধারণ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলো হচ্ছে- পিউবিক হেয়ারের প্রাথমিক লক্ষণ এবং গড় চূড়ান্ত উচ্চতাসহ দ্রুততর বিকাশ।

কারণঃ

কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়ায় বা CAH হওয়ার সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে পিতামাতা উভয়েরই এই রোগে আক্রান্ত থাকা বা মিউটেটেড জিনের বাহক হওয়া। এই জিন 21-Hydroxylase এই ঘাটতি তৈরি করে। যার প্রভাবে উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো এই রোগে আক্রান্ত মানুষের দেহে প্রকাশ পেতে থাকে।

রোগ নির্ণয়ঃ

শিশুর বাবা-মা অথবা বড় ভাই-বোন এই রোগে আক্রান্ত থাকার ফলে যখন তারা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পতিত হয়, তখন গর্ভে থাকা অবস্থাতেই অ্যামনিয়সেনটিসেস অথবা প্লাসেন্টা টেস্টের মাধ্যমে ভ্রুণের (ফ্যাটাল) অবস্থা নির্ণয় করা হয়। শিশু এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি নির্ণয়ের জন্য আরও কিছু টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। টেস্টগুলো হচ্ছে-
★ ফিজিক্যাল টেস্ট,
★ ব্লাড টেস্ট,
★ জেনেটিক টেস্ট।
আর শৈশবের শেষে বা যুবক অবস্থায় উপনিত হওয়ার প্রথম দিকে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে-
★ রোগীর লিঙ্গ, লক্ষণ প্রকৃতি এবং অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই রোগের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

চিকিৎসাঃ

এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করানো সম্ভব। চিকিৎসার মূল লক্ষ্যগুলো হচ্ছে-
★ কর্টিসল প্রতিস্থাপন,
★ মিনেরালকর্টিকইডের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম নিষ্কাশন এবং সোডিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করা,
★ শরীরে আয়োডিন ও লবণের মাত্রা ঠিক রাখা,
★ কিছু মেয়েদের যোনির অস্বাভাবিকতা ঠিক করতে রিকোভারি বা পুর্নগঠনকর সার্জারী।

আরও পড়ুনঃ শিশুর ADHD রোগ কি?

Leave a Comment