এনাল ফিসারের কিছু চিকিৎসা।

এনাল ফিসার বা গেজ রোগের অন্যান্য চিকিৎসাঃ 

ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে এনাল ফিসার প্রতিরোধের পরামর্শগুলো মেনে চললে প্রায় অর্ধেক রোগীর এনাল ফিসার ভালো হয়ে যায়। বাকিদের আরও চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। প্রথমে কিছু ওষুধ সেবন এবং মলম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এতেও কাজ না হলে এনাল ফিসার অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

গেজ রোগ প্রতিরোধের পরামর্শগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপারেশনের প্রয়োজন পড়বে না। অভ্যাসে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা কঠিন মনে হতে পারে। যেমন প্রতিবার খাওয়ার সময়ে চিন্তা করতে হবে খাবারে ফাইবার কতটুকু আছে, তার চেয়ে একটি ওষুধ খেয়ে বা অপারেশন করে সমস্যা দূর হয়ে যাওয়া অনেকের কাছেই সহজতর মনে হতে পারে।

কিন্তু এই রোগ যাতে আবার না হয়, সেজন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা জরুরী। অপারেশন করার পরেও ডাক্তার আপনাকে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিবে। অন্যথায় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে আবারও গেজ রোগ দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ, ঔষধ সেবন ও অপারেশন করলেও, গেজ রোগ বা এনাল ফিসারের স্থায়ী সমাধানে, অভ্যাস পাল্টে সুস্থ জীবনধারা বেছে নেওয়ার বিকল্প নেই।

এনাল ফিসারের ঔষধঃ

এনাল ফিসারের চিকিৎসায় ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ সেবনের এবং মলম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ঔষুধগুলো কেবল চিকিৎসকের পরামর্শক্রমেই সেবন করতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গেজ রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. জোলাপ বা ল্যাক্সেটিভঃ

এগুলো সিরাপ, ট্যাবলেট বা বড়ি হিসেবে পাওয়া যায়। এই ঔষধগুলো পায়খানায় পানির পরিমাণ ধরে রেখে তা নরম রাখতে এবং পায়খানা শক্ত হওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন বয়সের মানুষের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঔষুধ ব্যবহার করতে হয়।

২. গ্লিসারাইল ট্রাইনাইট্রেট ও ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার মলমঃ

এই মলম মলদ্বারের ভেতরের ও আশেপাশের পেশি ও রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে। এর ফলে ফাটলের স্থানে রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায় এবং ফাটল দ্রুত সেরে ওঠে। সেই সাথে পায়ুপথের ভেতরের চাপ কমে যাওয়ার ফলে ব্যথাও দ্রুত কমে যায়।

মলম দুটি বেশ কার্যকর। সঠিক উপায়ে ব্যবহার করলে প্রতি ১০ জন ক্রনিক ফিসারের রোগীর মধ্যে ৭-৮ জনের ফাটল ঠিক হয়ে যায়। এই মলমগুলো সাধারণত কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ অথবা ফাটল সম্পূর্ণরূপে সেরে না ওঠা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়।

তবে মলমগুলোর বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত। এছাড়াও শিশু,গর্ভবতী মা বা মাথাব্যথার সমস্যা আছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এসব মলম ব্যবহার করা ঠিক নয়।

৩. টপিক্যাল অ্যানেস্থেটিকঃ

শরীরের বহির্ভাগে ব্যবহার করার চেতনানাশক মলম বা জেল হিসেবে পাওয়া যায় এগুলো। অসহনীয় ব্যথা হলে এটি ব্যবহার করা হয়। এতে ফাটল সারে না, তবে ব্যথা উপশম হয়। এটি অতিরিক্ত ব্যবহার করা ক্ষতিকর। এমনকি মারাত্মক হতে পারে।

এনাল ফিসারের চিকিৎসায় নিয়মিত ডাক্তারের ফলো-আপে থাকতে হয়। ৮ সপ্তাহ চিকিৎসা নেওয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তার সবকিছু বিবেচনা করে রোগীকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে রেফার করতে পারেন।

এনাল ফিসার অপারেশনঃ

গেজ রোগ অন্য কোন চিকিৎসায় সারানো না গেলে ডাক্তার অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সাধারণত অপারেশনকে এনাল ফিসারের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে গণ্য হয়। এক্ষেত্রে ৯০%-এরও বেশি রোগী দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা লাভ করে থাকে। তবে এর থেকে নানা জটিলতা সৃষ্টিরও ঝুঁকি থাকে।

এনাল ফিসারের চিকিৎসায় অনেক ধরনের অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনগুলো খুব জটিল বা সিরিয়াস অপারেশন না। সাধারণত রোগী অপারেশনের দিনই বাসায় ফিরে যেতে পারে বা সর্বোচ্চ ১ দিন পর্যবেক্ষণ করে রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়।

এনাল ফিসার অপারেশন এর মধ্যে বহুল প্রচলিত দুটি পদ্ধতি হলো—

১. ল্যাটারাল স্ফিংকটারেকটোমিঃ

এ পদ্ধতিতে পায়ুপথের ভেতরের দিকের অতিরিক্ত মাংসপেশি অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ দেয়া হয়। এতে করে মাংসপেশি রিলাক্স হয় এবং পায়ুপথের ভেতরের চাপ কমে আসে। এই অপারেশন এনাল ফিসার সারাতে সাহায্য করে এবং নতুন ফাটল তৈরি হওয়া প্রতিরোধ করে।

২. অ্যাডভান্সমেন্ট অ্যানাল ফ্ল্যাপঃ

এই পদ্ধতিতে শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে একটি সুস্থ টিস্যু নিয়ে তা এনাল ফিসারের ফাটল মেরামতের কাজে ব্যবহার করা হয়। এবং ক্ষত স্থানের রক্ত সঞ্চালন সুগম করার ব্যবস্থা করা হয়। এই পদ্ধতি সাধারণত গর্ভাবস্থা বা মলদ্বারে আঘাত থেকে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী ফিসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

 

-Rumel Rahman

Leave a Comment