অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর খাদ্য–

হাঁপানিতে সঠিক ডায়েট

 

হাপানি বা অ্যাজমা কতটা ভয়াবহ শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিরাই জানেন। এই রোগটির মত কষ্টদায়ক রোগ আর নেই বললেও ভুল হবে না। চলছে বর্ষাকাল। আষাঢ়ের এই মৌসুমে কখনও সূর্যের প্রখর রৌদ্র আমাদের অতিষ্ট করে তুলে আবার কখনও শুরু হয় হঠাৎ বৃষ্টি। আবহাওয়া ঘনঘন এই পরিবর্তনের অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীরা বেশ বিপাকে পড়ে যায়। কারণ, এমন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা অনেক গুণ বেড়ে যায়। আবার শীতকাল এলেও এই রোগে আক্রান্ত রোগীর কষ্টের শেষ থাকে না। ঠান্ডা আবহাওয়া, ঠান্ডা খাবার বা ঠান্ডা পানি পান করলেই বেড়ে যায় এই রোগের কষ্ট।

অ্যাজমা রোগীদের নানা কারণেই অক্সিজেন বহনকারী নালীপথ সংকুচিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যার প্রভাবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছাড়াও আক্রান্ত রোগীর শারীরিক আরও নানা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে।

এসব জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর অবশ্যই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করার পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় বিশেষ কিছু বিশেষ খাবার রাখা উচিত। এসব খাবার হঠাৎ উদ্ভূত শ্বাসকষ্টের সমস্যাকে বাঁধা দিতে বেশ সহায়ক। তাহলে আসুন জেনে নেই কি কি সেই খাবার।

লেবুঃ

অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগটি ফুসফুসের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। ফুসফুসের সমস্যার কারণে এ ধরনের রোগীদের অক্সিজেন লেভেল কমে যায়। যার প্রভাবে শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হয় রোগীর। এই অ্যাজমার সমস্যা সমাধানে খাদ্য তালিকায় লেবু রাখতে পারেন। লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি শারীরিক সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অক্সিজেনের কার্যক্ষমতাও বাড়িয়ে থাকে।

আঙুরঃ

আঙুর ফলটি মূলত এর গড়ন, পুষ্টিগুণ, রং এবং নিজের স্বাদের জন্য বিখ্যাত । সুপার ফুড খ্যাত এই ফলটি ত্বকের নানা সমস্যা দূর করার পাশাপাশি তারুণ্য ধরে রাখার কাজে বেশ পারদর্শী। এছাড়া এই ফল শরীরের অক্সিজেনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে সহায়তা করে। যা অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজে করে।

তরমুজঃ

গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং পানিতে ভরপুর এই ফলটি অ্যাজমা রোগীদের শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই ফলটিকে রাখতেই পারেন।

ব্রোকলিঃ

বিদেশি সবজি ব্রোকলি স্বাদে যেমন অনন্য, তেমনিই পুষ্টিগুণেও দারুণ সমৃদ্ধ। পুষ্টিবিদরা বলেন, নিয়মিত ব্রোকলি খেলে অনেক রোগই প্রতিহত করা সম্ভব। ব্রোকলিতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস ফুসফুসের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের এই সবজিটি খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

এসব খাবারের পাশাপাশি অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা খাদ্য তালিকায় আদা, শসা, কলা, পালং শাক, হলুদ, আপেল, গাজরের মতো খাবারগুলোও বেশি প্রাধান্য দিতে পারেন। এই খাবারগুলো রোগীর হঠাৎ শ্বাসকষ্টের সমস্যা তৈরি করতে বাঁধা দিতে কাজ করে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে পারে এই খাবারগুলো।

গরম পানি ও গরম খাবারঃ

শীতকালে ঠান্ডা খাবার এবং ঠান্ডা পানি অ্যাজমা রোগকে বাড়িয়ে দেয়। এজন্য শীতের মৌসুমে কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এবং গরম খাবার খেতে হবে এই রোগে আক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তিকে। আবার গোসল করার সময়ও বিশেষ করে শীতকালে ও বর্ষাকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

যে সকল খাবার এড়িয়ে চলতে হবেঃ

উপরে উল্লেখিত খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি এড়িয়ে চলতে হবে বিড়ি, সিগারেট, অ্যালকোহল যুক্ত পানীয়, ডিম, দুধ, চীনাবাদাম, সয়া নাগেট এবং ফ্রোজেন আলুর চিপসের মতো ক্ষতিকর খাবারগুলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খাবারের উপাদান শরীরে হাঁপানির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে কাজ করে। তাই হাঁপানি বা অ্যাজমার ক্ষেত্রে উপকারী ও অপকারী খাবারগুলো কি কি প্রথমে সেগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। শীতকালে ঠান্ডা পানি ও খাবার খাওয়া যাবে না। ফ্রিজের পানি সব সময় এড়িয়ে চলতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে যে সকল খাদ্য আপনার জন্য উপকারী সে সকল খাদ্য নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি যে সকল খাবার দেহের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো পরিহারের মাধ্যমে সঠিক ডায়েট লিস্ট তৈরি করতে হবে।

 

–Rumel Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *